Kahhak Publishers

রোমাঞ্চ ও রহস্যের জাল উন্মোচন করতে পড়ুন থ্রিলার গল্প

 

থ্রিলার এক জটিল আবর্ত

পাঠকের মনে উৎকণ্ঠা, উত্তেজনা, বিস্ময় ও পূর্বাভাস জাগিয়ে তোলে থ্রিলার। দর্শক কখনো থ্রিলার দেখতে দেখতে উত্তেজনায় চেয়ারের কিনারায় চলে আসেন, তো কখনো দাঁতে নখ কেটে কেটে ছোট করে ফেলেন। কখনো বা পড়তে পড়তে সময়ের জ্ঞান ভুলে একদিনে গোটা বই শেষ করে দেন। থ্রিলার এমনই এক বিষয় যা মানুষের আশঙ্কা ও উত্তেজনাকে বাড়িয়ে তোলে। একটা প্লট ঘিরে চলতে থাকে কাহিনী। আর সেখানে পদে পদে অপেক্ষা করে থাকে ভরপুর টুইস্ট। কাহিনী নতুন নতুন বাঁক নিলে সেই টুইস্টগুলো মাথাচাড়া দিয়ে বেরিয়ে পড়ে। তখনি বুকের ধুকপুকানিও দ্বিগুণ টের পাওয়া যায়। পাঠক বা দর্শক প্রতীক্ষা করেন চরম পরিণতির জন্য। কিছু রহস্য গল্প এমনও হয় যেখানে প্রথমেই খুনি বা দোষী কে, সেটা আন্দাজ করা যায়। কিন্তু তার মোটিভ কী, কিভাবে সে একটা ক্রাইম করেছে এবং কিভাবে কেসটার সমাধান হচ্ছে, তা জানার আগ্রহে পাঠক বা দর্শক রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা করেন। থ্রিলার যেভাবে ইচ্ছে উপস্থাপনা করা গেলেও মাথায় রাখতে হয় যাতে গল্পের জটগুলোর বাঁধন যেন ঠিক থাকে। কারণ ধাঁধার উত্তর খোঁজার মধ্যেই তো আনন্দ।

থ্রিলারের সিক্রেট-

থ্রিলার অনেক ধরণের হয়। সাইকোলজিক্যাল, মেডিক্যাল, ক্রাইম, পলিটিক্যাল, স্পাই থ্রিলার ইত্যাদি। থ্রিলার আসলে মানুষের অন্দরে থাকা সমস্ত নেগেটিভ সত্ত্বাকে জাগিয়ে তোলে। টেনে বের করে আনে অন্ধকার দিক। মানসিক দ্বন্দ্ব, বিতৃষ্ণা, টানাপোড়েন, মনের অলিগলিতে যত রাগ ও যন্ত্রণা লুকিয়ে থাকে সবকিছুকে লোকচক্ষুর সামনে আনে থ্রিলার। যারা এতদিন সুখের নিদ্রা দিচ্ছিল তাদের ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে দাঁড় করে বাস্তবতার সামনে।

থ্রিলারের বৈশিষ্ট্য-

সাসপেন্স, রোমাঞ্চ বা থ্রিলার ঘরানার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। ঠিক কতটা তথ্য দেওয়া উচিত এবং কখন দিলে পাঠকের সুস্থ মস্তিষ্কে ধাক্কা দেওয়া যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। এগুলি বর্ণনার সময় অপ্রত্যাশিত, রহস্যময় ও রোমাঞ্চকর অনুভূতির সৃষ্টি হয় যা শেষ অবধি পাঠক বা দর্শককে আবদ্ধ থাকতে বাধ্য করে। আরো কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হয় তা হল- যেভাবেই হোক গল্পের নায়ককে কঠিন থেকে কঠিনতর পরিস্থিতিতে ফেলা। আগের থেকে পরের ধাপ যাতে আরো বেশি কণ্টকময় হয় সেভাবেই হবে কাহিনীর বুনন। হিরোকে মানসিকভাবে উদ্বুদ্ধ করবে এমন একজন মেন্টর থাকে থ্রিলার গল্পে। প্লট টুইস্টের সাথে আরো একটা বিষয় যুক্ত হলে ব্যাপারটা জমে যায় সেটা হল- ভুল প্রত্যাশা। অর্থাৎ পাঠক যাকে দোষী ভেবে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, দেখা গেল তার ধারপাশ দিয়ে ঘেঁষলেন না লেখক। সম্পূর্ণ অন্য রাস্তা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছোলেন তিনি। এই চমকটাই পাঠককে আরো উত্তেজিত করে তোলে। রহস্য গল্প তখনি জনপ্রিয় হয় যখন পাঠকের চিন্তার জাল হঠাৎ ছিঁড়ে অন্য প্লটে আচমকা প্রবেশ করা হয়। যেন বুদ্ধির গোড়ায় আরও শান দেওয়ার পরিকল্পনা।

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি খাঁজ অনিশ্চয়তা আর অজানা ঘটমানতায় ভরা। তাই বোধহয় রহস্য আমাদের এত পছন্দের বিষয়। অজানার ওপারে কী আছে, তাকে ছোঁয়ার, রহস্য ভেদের এত আগ্ৰহ। সারা বিশ্বে বহু প্রতিভাশালী লেখক অসাধারণ সব রহস্য সৃষ্টি এবং তার চমকপ্রদ সমাধান করেছেন। চিরুনি তল্লাশির গল্পগুলিতে পাবেন এমনই সব আকর্ষক রহস্য এবং তার সমাধানের খোঁজ।

রহস্য নিয়ে কথা হচ্ছে অথচ গোয়েন্দা চরিত্রের কথা উঠবে না তা কি হয়? বাঙালির দুই নয়নের মণি ফেলুদা এবং ব্যোমকেশ। ফেলুদা মার্শাল আর্টে বিশেষ দক্ষ। যদিও অসম্ভব ভালো বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের ক্ষমতার ওপরেই যে কোনও রহস্যের সমাধানে সে আস্থা রাখতে ভালোবাসে। তার এই বিশেষ ক্ষমতাকে সে মজা করে বলে থাকে মগজাস্ত্র। ওদিকে ব্যোমকেশ বক্সী সম্পর্কে অজিতের বক্তব্য “তাহার বয়স বোধকরি তেইশ-চব্বিশ হইবে, দেখিলে শিক্ষিত ভদ্রলোক বলিয়া মনে হয়। গায়ের রঙ ফরসা, বেশ সুশ্রী সুগঠিত চেহারা-মুখে চোখে বুদ্ধির একটা ছাপ আছে।”

বাংলা সাহিত্যে ব্যোমকেশ-ফেলুদার এই মিষ্টি যুদ্ধের ফাঁকে ফাঁকে ইদানিং বেশ কিছু গোয়েন্দা চরিত্র জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তাঁরাও নিজস্ব কিছু ছাপ রেখে যাচ্ছে রহস্য, রোমাঞ্চ ঘরানার সাহিত্যে। পাঠকদের দৃষ্টি থাকুক সেদিকেই। উন্মোচন হোক নতুন চরিত্রের আর সেই সঙ্গে পাঠকরাও মেতে উঠুক থ্রিলার ঘরানায় ।

Post a Comment

Kahhak Publishers
8/1A, Hindustan Park, Kol- 29 83369 66166 publishers@kahhak.com


    Request a Callback
    Icon