Kahhak Publishers

মুচকি হাসি থেকে অট্টহাসি: হাসতে হলে ,পড়তে হবে ঠোঁটের কোলাজ

 

হাসতে যাদের মানা!

জীবনে হাসির প্রয়োজন অনস্বীকার্য। একজন সুস্থ মানুষের পক্ষে হাসি ত্যাগ করে থাকা অসম্ভব। আধুনিক সমাজ যত জটিল হচ্ছে, মানুষের জীবন থেকে কোমল অনুভূতিগুলো ততই বিপজ্জনক হারে কমে চলেছে। প্রাণ খুলে হাসতে ভুলেছে সমাজ। তাই অন্যান্য বিষয়ের মতো কমেডি ঘরানার চাহিদা আজকের জীবনে ভীষণ অপরিহার্য। “ভাবছি মনে, হাসছি কেন? থাকব হাসি ত্যাগ ক’রে

ভাবতে গিয়ে ফিকফিকিয়ে ফেলছি হেসে ফ্যাক ক’রে।” কমেডি ঘরানার এমনই মাহাত্ম্য! সুকুমার রায়ের লেখার মতো আমাদেরও একই দশা। কাজের চাপে, জীবনের চাপে হাসিকে আমরা বহুদূর ঠেলে দিলেও, পেট গুড়গুড় করে হাসি ঠিক বেরিয়ে আসে। হাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্ম হল এমন এক ধরনের সৃষ্টিকর্ম যা হাস্যরসের উদ্রেক করে থাকে। হাসতে হাসতে যদি পেটে খিল না ধরল তাহলে আর কমেডি কী। তবে হাসি যতটা সহজ, হাসানো ততটাই কঠিন। যেহেতু মানুষ ট্র্যাজেডি প্রিয় তাই মানুষকে আনন্দ দেওয়াই সবচেয়ে কঠিন কাজ। আর আজকের যুগে এই কঠিন কাজটাই যাঁরা সহজভাবে করে থাকেন তাঁদের মতো শিল্পীদের জুড়ি মেলা ভার।

কমেডির প্রাণ হল ‘পান’:

শব্দের খেলাই কমেডির অন্যতম হাতিয়ার। ‘পান’ হল কমেডির একটি উপাদান। বাংলার তাবড় কমেডি লেখকেরা ‘পান’ ব্যবহার করেই পাঠকদের মন জয় করে নিয়েছেন। শুধু কমেডি লেখকই নন, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে কী রসিক মানুষ ছিলেন তা হয়তো অনেকেরই অজানা। একটা ঘটনা উল্লেখ করা যাক। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় সে সময় শান্তিনিকেতনের গ্রন্থাগারের দায়িত্বে ছিলেন। রাতে বাড়িতে পড়াশোনার জন্য প্রতিদিনই গ্রন্থাগার থেকে এক বোঝা বই নিয়ে বাড়ি ফিরতেন। একদিন বিকেলে এমনি বইয়ের বোঝা নিয়ে ফিরছেন। এমন সময় দূর থেকে কবিগুরুর ডাক শুনতে পেলেন, ‘ওহে বৈবাহিক, শোনো শোনো!’ প্রভাতবাবু অবাক। তাড়াতাড়ি গুরুদেবের কাছে গিয়ে বললেন, ‘আপনি আমাকে বৈবাহিক বলছেন কেন?’ গুরুদেব হেসে বললেন ‘আরে সে বৈবাহিক নয়, আমি তোমাকে ডাকছি বই-বাহিক বলে।’

হাসির রকমফের:

কমেডি বিভিন্ন ফর্মে ব্যবহৃত হতে পারে। মঞ্চনাটক হোক বা সিনেমা, স্ট্যান্ড আপ কমেডি হোক বা সাহিত্য, কমেডির জয়জয়কার সর্বত্র। আট থেকে আশি সকলের মন ভালো রাখার একটাই ওষুধ- হাসি। আপনি যেভাবে ইচ্ছে হাসাতে পারেন। তবে হ্যাঁ, হাস্যরস ,কমেডিবুঝতে গেলে সেই বোধ থাকা জরুরি। হাস্যরসের সাথে জড়িত বিষয়াবলী এবং যা হাসির উদ্রেক করে, তা নিয়ে মনোবিজ্ঞানীগণ গবেষণা করেছেন। তাঁরা এই বিষয়ে একমত যে কমেডি তখনই মনোগ্রাহী হয়ে ওঠে যখন মূল বিষয়কেই হাস্যকর করে পেশ করা হয়। অর্থাৎ জীবনের কঠিন পরিস্থিতিগুলোকে যে যতবেশি সহজভাবে নিয়ে হাস্যরস যোগ করে উপস্থাপন করবে, সে তত বেশি সফল। সেখানেই একজন স্রষ্টার সার্থকতা। তখন কষ্টগুলোকে কষ্ট বলে মনে হয় না। যেমন চার্লি চ্যাপলিন এর আদর্শ উদাহরণ। দারিদ্র্য, শারীরিক খামতি, একাকীত্বের মতো গভীর সমস্যাগুলোর সঙ্গে তিনি জীবনযাপন করতেন। কিন্তু তাঁর অবস্থা দেখে আমাদের কান্না নয়, হাসি পায়। নেগেটিভিটিকে তিনি যেভাবে ব্যঙ্গ করে উড়িয়ে দিয়েছেন তা দেখলে আজও অবাক হতে হয়। শুধু তাই নয় তাঁর কমেডির মধ্য দিয়ে উঠে আসে জীবনের প্রতি এক গভীর বার্তা।

শুধু ব্যক্তিগত জীবন নয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক কোনো পরিস্থিতির প্রতিবাদ করতে হলে কমেডির চেয়ে ভালো হাতিয়ার কিছু নেই। প্যারোডি, ডার্ক কমেডি, স্ল্যাপস্টিক কমেডি, ট্র্যাজিক কমেডি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণ কমেডি ঘরানার অঙ্গ। লেখক যে ধরণই বেছে নিক না কেন, হিউমার থাকা অত্যন্ত জরুরি। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ হাস্যকর হলেও কত মানুষকে যে রোষের মুখে পড়তে হয় তার ঠিক নেই। তাহলে বোঝা যাচ্ছে কমেডির বিস্তার কতটা।

হাস্যরস ভালোবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। টেনিদা, নন্টে-ফন্টে, বাঁটুল দি গ্রেট, গোপাল ভাঁড়, বীরবল, পাগলা দাশু, হর্ষবর্ধন ও গোবর্ধন প্রভৃতি চরিত্রগুলি আজও আমাদের মনে জীবন্ত। আসলে আমরা যতই কংক্রিটের জঙ্গলে থেকে অভ্যস্ত হই না কেন, আমাদের প্রত্যেকের বাঁচার জন্য একটা করে সবুজ মাঠ দরকার। আর এই সবুজ মাঠই হল কমেডি।

Post a Comment

Kahhak Publishers
8/1A, Hindustan Park, Kol- 29 83369 66166 publishers@kahhak.com


    Request a Callback
    Icon